ত্রিভুজ | ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য | ত্রিভুজের প্রকারভেদ | ত্রিভুজ প্রকল্প | সমবাহু ত্রিভুজ | সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ | বিষমবাহু ত্রিভুজ | সমকোণী ত্রিভুজ | সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ | স্থূলকোণী ত্রিভুজ |

ত্রিভুজ

তিনটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ আকার বা আকৃতি বা ক্ষেত্রকে ত্রিভুজ বলে।
ইউক্লিডিও জ্যামিতি অনুযায়ী, একই সরলরেখায় অবস্থিত নয় এমন তিনটি বিন্দু দ্বারা একটি ও কেবল একটি ত্রিভুজ অঙ্কন করা যায়।


অন্যভাবে বললে, যে বহুভুজের কেবল তিনটি বাহু ও তিনটি শীর্ষবিন্দু থাকে তাকে ত্রিভুজ বলে। ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দু বলতে বোঝায়, এর যেকোনো দুইটি বাহু পরস্পর যে বিন্দুতে মিলিত হয়।
আবার বাহুর সংখ্যা বিবেচনায়, ত্রিভুজই সর্বনিম্ন বহুভুজ অর্থাৎ, এমন কোনো বহুভুজ নেই যার বাহুর সংখ্যা তিন এর কম। ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০°।

ত্রিভুজ গঠিত হওয়ার পর রেখাংশ তিনটির প্রত্যেকটিকে ত্রিভুজের বাহু বলে। আর এই ত্রিভুজ দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজক্ষেত্র বলে।

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য:

1. ত্রিভুজ একটি দ্বি-মাত্রিক জ্যামিতিক তল।
2. ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০° বা দুই সমকোণ।
3. প্রতিটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু, তিনটি কোণ ও তিনটি কৌণিক বিন্দু(শীর্ষবিন্দু) থাকে।
4. ত্রিভুজকে বহুভুজও বলা যায়।
5. বাহুর সংখ্যা বিবেচনায়, ত্রিভুজই সর্বনিম্ন বহুভুজ যার বাহু সংখ্যা 3।
6.বাহুভেদে ত্রিভুজ তিন প্রকার যথা- সমবাহু ত্রিভুজ, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ ও বিষমবাহু ত্রিভুজ।
7. কোণভেদেও ত্রিভুজ তিন প্রকার যথা সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ, স্থূলকোণী ত্রিভুজ ও সমকোণী ত্রিভুজ।
৪. সমবাহু ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের পরিমাপ ৬০°।
9. সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণদ্বয় পরস্পর পূরক।
10. ত্রিভুজের যে কোন দুই বাহুর সমষ্টি, তার তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর।
11. ত্রিভুজের যে কোন দুই বাহুর অন্তর, তৃতীয় বাহু অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর। অর্থাৎ ত্রিভুজের দুটি বাহু বিয়োগ করলে যেন তৃতীয় বাহু অপেক্ষা ছোট হয়।
12. কোনো ত্রিভুজের বৃহত্তর বাহুর বিপরীত কোণের পরিমাপ বৃহত্তর হবে।
13. কোন ত্রিভুজের সমান সমান বাহুর বিপরীত কোণগুলো ও পরস্পর সমান। অর্থাৎ যদি একটি ত্রিভুজের দুটি বাহু পরস্পর সমান হয়, তাহলে তাদের বিপরীত কোণদ্বয় ও সমান হবে।
14. কোন ত্রিভুজের সমান সমান কোণের বিপরীত বাহুগুলোও পরস্পর সমান। অর্থাৎ ত্রিভুজের দুটি কোণ সমান হলে তাদের বিপরীত বাহুগুলোও সমান হয়।
15. ত্রিভুজের বাহুগুলির লম্ব সমদ্বিখন্ডিত তিনটি সমবিন্দু। এই সমবিন্দুগুলিকে বলা হয় পরিকেন্দ্র (Circum Centre)।
16. ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত রেখাংশকে বলা হয় মধ্যমা (Medium)।
17. ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব তিনটি সমবিন্দু। এগুলিকে বলা হয় লম্ববিন্দু (Ortho Centre)।

ত্রিভুজের প্রকারভেদt

ত্রিভুজ কত প্রকার তা সুনির্দিষ্ট করা একটু কঠিন হলেও বাহু অনুসারে ত্রিভুজের প্রকারভেদ, কোণ অনুসারে ত্রিভুজের প্রকারভেদ এবং ত্রিভুজের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সাধারণত যে কয়টি ত্রিভুজ পাওয়া যায় তার মধ্যে নিম্নলিখিত দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে আলোচনা করা হলো।
(১) বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজের শ্রেণীবিভাগ
(২) কোণভেদে ত্রিভুজের শ্রেণীবিভাগ

(১) বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজের শ্রেণীবিভাগ
বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকারের হতে পারে। যথা:-

‌সমবাহু ত্রিভুজ

‌সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ

‌বিষমবাহু ত্রিভুজ

সমবাহু ত্রিভুজ

ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে। এটি একটি সুষম ত্রিভুজ কারণ এর প্রতিটি বাহুর  দৈর্ঘ্যের মান পরস্পর সমান। আবার, এর বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য সমান বলে কোণ তিনটিও পরস্পর সমান।

সমবাহু ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

1. সমবাহু ত্রিভুজ হল একটি সুষম ত্রিভুজ কারণ সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি বাহু সমান বলে এর কোণ তিনটিও সমান।
2. সমবাহু ত্রিভুজ একটি সুষম বহুভুজ যার বাহুর সংখ্যা তিন।
3. সুষম বহুভুজ হওয়ার কারণ হলো এই বহুভুজের বাহু তিনটি পরস্পর সমান।
4. এই ত্রিভুজের তিনকোণের সমষ্টি ১৮০° |
5. সমবাহু ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের পরিমাপ ৬০°।

সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ

"সম" মানে সমান এবং "দ্বিবাহু" মানে দুইটি বাহু। অর্থাৎ, যে ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে। আবার বলা যায়, যে ত্রিভুজের কেবল দুইটি বাহু সমান তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে। আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয়, যে ত্রিভুজের কমপক্ষে দুইটি বাহু পরস্পর সমান, তাই সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ।
এক্ষেত্রে, সকল সমবাহু ত্রিভুজকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলা যায়। আবার, যে ত্রিভুজের দুইটি কোণ পরস্পর সমান তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।

সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

1. এই ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান
2. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের যেকোনো একটি কোণের মান জানা থাকলে অপর কোণ দুইটির পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
3. যদি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের শীর্ষ কোণ ৯০° হয় তাহলে
অপর দুটি কোণ হবে ৪৫°।(সেটিকে সমকোণী সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলা হয়)
4. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণ দুটি সমান হয়।

বিষমবাহু ত্রিভুজ

বিষমবাহু শব্দটির মানেই হলো সমান নয়। অর্থাৎ, ত্রিভুজের তিনটি বাহু পরস্পর অসমান হলে তাকে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।
বিষমবাহু ত্রিভুজ হলো সকল ত্রিভুজের সাধারণ রূপ। অর্থাৎ,বিষমবাহু ত্রিভুজের কোনো কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যান্য ত্রিভুজ উৎপন্ন হয়।
যেমন বিষমবাহু ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান হলে তখন সেটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হয়ে যায়।
একইভাবে, বিষমবাহু ত্রিভুজের তিনটি বাহু পরস্পর সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।

বিষমবাহু ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

1. এই ত্রিভুজের বাহু তিনটি পরস্পর সমান নয়।
2. বিষমবাহু ত্রিভুজ হলো সকল ত্রিভুজের সাধারণ রূপ।

(২) কোণভেদে ত্রিভুজের শ্রেণীবিভাগ

কোণের ভিত্তিতে ত্রিভুজকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।যথা-

‌সমকোণী ত্রিভুজ

‌সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ

‌স্থূলকোণী ত্রিভুজ

সমকোণী ত্রিভুজ :

ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ হলে তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে। ১ সমকোণ = ৯০°। সুতরাং, যে ত্রিভুজের একটি কোণের পরিমাপ ৯০° তাই সমকোণী ত্রিভুজ।
সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে এবং অতিভুজই সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহু। এই ত্রিভুজের সমকোণ ব্যতীত অপর কোণ দুইটি পরস্পর পূরক কোণ কারণ এই কোণ দুইটির সমষ্টি ৯০°।

সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

1. সমকোণী ত্রিভুজের উপর ভিত্তি করে পিথাগোরাসের উপপাদ্য গড়ে উঠেছে।
2. এই ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
3. সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ সংলগ্ন বাহু দুইটিকে লম্ব ও ভূমি বলে ।

সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ

যে ত্রিভুজের তিনটি কোণের প্রত্যেকটি সূক্ষ্মকোণ, তাকে সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ বলে। সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের বাহুত্রয় পরস্পর সমান হতে পারে; আবার বাহুত্রয় অসমানও হতে পারে। তবে, বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান হলে তখন এটি সমবাহু ত্রিভুজ হয়ে যায়।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের দুইটি কোণ পরস্পর সমান হলে তখন সেইটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হয়ে যায়।

সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ

1. সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের তিনটি অন্তর্লিখিত বর্গক্ষেত্র আঁকা যায়।
2. সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের দুইটি কোণ পরস্পর সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।

স্থূলকোণী ত্রিভুজ

যে ত্রিভুজের একটি কোণ স্থূলকোণ সেই ত্রিভূজকে স্থূলকোণী ত্রিভুজ বলে। স্থূলকোণী ত্রিভুজের স্থূলকোণ ব্যতীত এর অপর দুটি কোণ হচ্ছে সূক্ষ্মকোণ। স্থূলকোণী ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০°।
স্থূলকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্যঃ
1. এই ত্রিভুজের স্থূলকোণ ব্যতীত অপর কোণ দুইটির প্রত্যেকটি সূক্ষ্মকোণ।
2. এই ত্রিভুজের স্থূলকোণের বিপরীত বাহুই বৃহত্তম বাহু। 3. ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০°।

Post a Comment

0 Comments