পরিবেশ।সপ্তম শ্রেণী।তাপ। Class 7 science।

সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান সাজেশন MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান সাজেশন MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর


সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তর (তাপ)

(i)  তাপ বলতে কী বোঝো ? 

তাপ হল একপ্রকার শক্তি, যা গ্রহণ করলে বস্তু উত্তপ্ত হয় এবং বর্জন করলে বস্তু সাধারণত ঠান্ডা হয়।

(ii) উষ্ণতা বলতে কী বোঝায়?

উষ্ণতা হল বস্তুর এমন একটি তাপীয় অবস্থা, যা তাপপ্রবাহের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করে। দ্বিতীয় কোনো বস্তুর সঙ্গে তাপীয় সংযোগে থাকলে, বস্তুটি অপর বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করবে না অপর বস্তুকে তাপ দেবে – তা এই ভৌতধর্ম দ্বারাই নির্ধারিত হয়। আসলে, উষ্ণতা হল তাপের ফল।

(iii) বোধগম্য তাপ বলতে কী বোঝো?

যে তাপের প্রভাবে বস্তুর উষ্ণতার পরিবর্তন হয় কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয় না, তাকে বোধগম্য তাপ বলে।

(iv) তাপ ও উষ্ণতার মধ্যে সম্পর্ক বিবৃত করো।

তাপ ও উয়তা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত হলেও দুটি ধারণা একই অর্থ বহন করে না। আলো, শব্দ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মতো তাপও একপ্রকার শক্তি, কিন্তু উন্নতা একপ্রকার তাপীয় অবস্থা। এক বালতি গরম জলে কিছু পরিমাণ ঠান্ডা জল ঢালা হলে বালতির জলের মোট তাপের পরিমাণ বাড়বে, কেননা ঠান্ডা জলে খুব সামান্য হলেও কিছু পরিমাণ তাপ ছিল। কিন্তু, এইবার বালতিতে হাত ডোবালে ওই জলকে পূর্বাপেক্ষা ঠান্ডা মনে হবে। এর দ্বারা বোঝা যায়, কোনো বস্তু ঠান্ডা নাকি গরম, এই অনুভূতি বস্তুতে সঞ্চিত মোট তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, এই অনুভূতি নির্ধারণ করে বস্তুর উন্নতা। কোনো বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে তার উন্নতা বৃদ্ধি পায়। বস্তু থেকে কিছু পরিমাণ তাপ অপসারিত হলে বস্তুটি শীতল হয়। সুতরাং, তাপকে যদি কারণ বলা হয়, তবে উন্নতাকে তাপের ফল হিসেবে ভাবা যায়।

জেনে রাখো: বস্তুর মধ্যে নিহিত তাপকে পাত্রে রাখা জলের পরিমাণ ও বস্তুর উন্নতাকে পাত্রের জলতলের উচ্চতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। দুটি সংযুক্ত পাত্রের মধ্যে জলপ্রবাহ ঘটার সময় জল সর্বদা বেশি উচ্চতা থেকে কম উচ্চতা অভিমুখে প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে উচ্চতার পার্থক্যই মূখ্য ভূমিকা পালন করে, জলের পরিমাণ নয়।

তেমনই তাপও সর্বদা উন্নতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তু অভিমুখে প্রবাহিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ, তাপপ্রবাহের অভিমুখ স্থির করে উন্নতার পার্থক্য, তাপের পরিমাণ নয়। তাই, তাপ ও উন্নতা যথাক্রমে জলের পরিমাণ ও জলতলের উচ্চতার সঙ্গে সদৃশ।

সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান সাজেশন MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর


ক্লাস সেভেন পরিবেশ ও বিজ্ঞান

(v) থার্মোমিটারের কার্যনীতির ব্যাখ্যা দাও।

থার্মোমিটারের কার্যনীতির ব্যাখ্যা উপরে আলোচিত পরীক্ষা ব্যবস্থাটি থেকে থার্মোমিটার যন্ত্র ও তার কার্যনীতির ধারণা পাওয়া যায়। উত্তপ্ত মানবশরীর বা কোনো উন্ন বস্তুর সংস্পর্শে এলে কাচপাত্রে রাখা তরলের মতো থার্মোমিটারের মধ্যে কাচের কুণ্ডে রাখা পারদ আয়তনে বাড়ে এবং সরু সুতোর আকারে কৈশিক নল বেয়ে ক্তি উপরে ওঠে। কৈশিক নলের দেয়ালে চিহ্নিত সর্বোচ্চ যে দাগে (সংখ্যায়) পারদ সূত্র পৌঁছায়, সেটিই সংশ্লিষ্ট বস্তুর উন্নতা নির্দেশ তাপ করে। বিভিন্ন মাত্রার গরম বস্তুর সংস্পর্শে আসা পারদসূত্রের উচ্চতাও লর পৃথক হয়, যা তাদের ভিন্ন ভিন্ন উন্নতা নির্দেশ করে। এভাবে অপর একটি রাশির (দৈর্ঘ্যের) সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন মাত্রার গরম বা ঠান্ডা অবস্থাসূচক সংখ্যা নির্দেশের দ্বারা থার্মোমিটার বস্তুর উন্নতা পরিমাপ করে থাকে।

(vi) থার্মোমিটারের কার্যপদ্ধতির মূলনীতি কী?

থার্মোমিটারের কার্যপদ্ধতির মূলনীতি  থার্মোমিটারের সাহায্যে উয়তা সরাসরি না মেপে পরোক্ষ উপায়ে পরিমাপ করা হয়। তাপ গ্রহণের ফলে যেসব পদার্থ তাদের ভৌত ধর্মের নিয়মানুগ পরিবর্তন করা দেখায় (যেমন – পারদ থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে তাপ প্রয়োগে তরলের আয়তন প্রসারণ) সেই সকল পদার্থকে উদ্ধৃতামাপক পদার্থ হিসেবে থার্মোমিটারে ব্যবহার করে উষ্ণতার পাঠ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

(vii) সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের মধ্যে সম্পর্ক।

সেলসিয়াস স্কেলের প্রাথমিক অন্তর = (100-0) = 100

ফারেনহাইট স্কেলের প্রাথমিক অন্তর = (212-32) = 180

সেলসিয়াস স্কেলে 100° উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস = ফারেনহাইট স্কেলে 180° উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস অর্থাৎ, 100 সেলসিয়াস ডিগ্রি (100C°) উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস = 180 ফারেনহাইট ডিগ্রি (180F°) উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস

100C° =180F°

বা

1C°=9/5F°

1F° =5/9C°

বিশেষ দ্রষ্টব্য স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক প্রথা অনুযায়ী, সেলসিয়াস স্কেলে উয়তা বৃদ্ধি বা হ্রাসকে লেখা উচিত 1C°, 1°C নয়।

সপ্তম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান এর প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর ও বিজ্ঞান

(viii) সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের উষ্ণতার পাঠের মধ্যে সম্পর্ক।

ধরা যাক, কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতার সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ যথাক্রমে C°ও F°। এখন, সেলসিয়াস স্কেলের পাঠ (C-0) ঘরের সমান এবং ফারেনহাইট স্কেলের পাঠ (F-32) ঘরের সমান।

আবার,

সেলসিয়াস স্কেলের 100 ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের 180 ঘর।

সেলসিয়াস স্কেলের 1 ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের 180/100 ঘর।

সেলসিয়াস স্কেলের (C-0) ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের 180/100*(C-0) ঘর।

সেলসিয়াস স্কেলের (C-0) ঘর = ফারেনহাইট স্কেলের (F-32)  ঘর।

180/100*(C-0)= (F-32)

বা, C/5=(F-32)/9

এটিই সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের উষ্ণতার পাঠের মধ্যে সম্পর্ক।

(ix) ডাক্তারি থার্মোমিটার (Clinical thermometer)-এর গঠন ও কার্যনীতি লেখো।

গঠন : এটি একটি পারদ থার্মোমিটার। সাধারণভাবে মানবদেহের উন্নতা পরিমাপের কাজে এই থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। 

● এই থার্মোমিটারে সমান প্রস্থচ্ছেদ এবং সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত কাচের কৈশিক নলের একপ্রান্তে পাতলা কাচের পার্শ্বতলযুক্ত চোঙাকৃতি কুণ্ড থাকে।

●  কুণ্ডের নিকটবর্তী স্থানে কৈশিক নলটি সরু ও বাঁকানো থাকে।

●  মানবদেহের উষ্ণতা অসুস্থ অবস্থায় সাধারণভাবে 94°F (প্রায় 34°C) থেকে 108°F (প্রায় 42°C)-এর মধ্যে ওঠানামা করে বলে ডাক্তারি থার্মোমিটারের স্কেল, (94°F-110°F)- এই পাল্লার মধ্যে অংশাঙ্কিত করা হয়।

● সুস্থ মানব শরীরের উষ্ণতা 98.4°F ( 36.89°C)। লাল রঙে অঙ্কিত একটি তিরচিহ্নের সাহায্যে (↑) উষ্ণতাটিকে স্কেলের গায়ে চিহ্নিত করা থাকে।

● প্রত্যেক ডিগ্রিকে সমান পাঁচটি (সেন্টিগ্রেড স্কেলের ক্ষেত্রে 10টি) অংশে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ, প্রত্যেক ক্ষুদ্রতম ঘরের মান হয় 0.2°F (সেন্টিগ্রেড স্কেলে 0.1°C)। কৈশিক নলের প্রস্থচ্ছেদ সুষম হওয়ায় সমান উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পারদসূত্র নল বরাবর একই হারে ওঠে। ফলে, উষ্ণতার পাঠ নির্ণয় নির্ভুল হয়।

কার্যনীতি : কুণ্ডের কাছে অবস্থিত খাঁজ বা বাঁকানো অংশটি থার্মোমিটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ওই অংশটির ওপরে কৈশিক নলের যে অংশটির অবস্থান তার মধ্যে পারদসূত্র ওঠানামা করে। দেহের উষ্ণতা মাপার জন্য থার্মোমিটারের কুণ্ডটিকে জিভের নীচে বা বগলের মধ্যে মিনিটখানেক রাখা হয়। থার্মোমিটারের কুণ্ড মানবদেহের সংস্পর্শে এলে কুণ্ডের পারদ উত্তপ্ত শরীর থেকে গৃহীত তাপের প্রভাবে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং বাঁকানো অংশ পেরিয়ে উপরে ওঠে। শরীর থেকে থার্মোমিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে খাঁজের নীচের অংশ উষ্ণতা হ্রাসের ফলে সংকুচিত হয়ে কুণ্ডে ফিরে যায়। কিন্তু বাঁকানো অংশের ওপরের পারদসূত্র ওই খাঁজ বরাবর সহজে নামতে পারে না। ফলে, পারদসূত্র দেহের উষ্ণতাজ্ঞাপক পাঠে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করে। এর ফলে নির্ভুল পাঠগ্রহণ সম্ভব হয়।

ক্লাস 7 বিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর

(x) তাপীয় সাম্য (Thermal Equilibrium) কাকে বলে?

ভিন্ন উষ্ণতায় থাকা দুই বা ততোধিক বস্তুকে পরস্পরের তাপীয় সংযোগে রাখা হলে দেখা যায়, তাদের উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে। বেশি উষ্ণতায় থাকা বস্তু বা বস্তুগুলির উষ্ণতা কমে ও কম উষ্ণতাযুক্ত বস্তু বা বস্তুগুলির উষ্ণতা বাড়ে এবং একসময় সবই সম উষ্ণতা লাভ করে। এই বিশেষ অবস্থাকে বলা হয় তাপীয় সাম্য বা তাপীয় সাম্যাবস্থা।

(xi) থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল : 

● উষ্ণতার পরিবর্তনে পারদের খুব নিয়মানুগ ও যথেষ্ট বেশি প্রসারণ ঘটে।

●পারদের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 357°C এবং হিমাঙ্ক –39°C। সুতরাং, এই বিস্তীর্ণ উষ্ণতার পাল্লায় পারদ থার্মোমিটার ব্যবহার করা যায়।

●কাচের গায়ে লেগে থাকে না বলে থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার সুবিধাজনক।

●পারদ অস্বচ্ছ এবং চকচকে বলে কাচের মধ্যে দিয়ে। একে স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে, পাঠ নেওয়া সুবিধাজনক হয়।

●পারদ সহজেই বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

●পারদ তাপের সুপরিবাহী বলে সহজেই পরীক্ষাধীন বস্তুর উষ্ণতায় আসতে পারে।

থার্মোমিটারে পারদ ব‍্যবহারের অসুবিধাগুলি হল:

●খুব বেশি (357°C অপেক্ষা বেশি) বা খুব কম (39°C অপেক্ষা কম) উন্নতা এই থার্মোমিটার দিয়ে মাপা যায় না।

●ঘনত্ব খুব বেশি হওয়ায় খাড়াভাবে ধরা থার্মোমিটারের দীর্ঘ পারদসূত্রের চাপের প্রভাবে পারদসূত্রের দৈর্ঘ্য আকারে বিকৃত হয়ে যেতে পারে।

(xii)‘তাপ একপ্রকারের শক্তি যে-কোনো দুটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাও।

(a) দুটি হাতকে পরস্পরের সাহায্যে ঘর্ষণ করলে দেখা যাবে যে, হাতের তালু দুটি গরম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তির বিনিময়ে তাপের সৃষ্টি হয়।

(b) কয়লা পোড়ালে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে কয়লাতে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি তাপে পরিবর্তিত হয়। ওই তাপের সাহায্যে জলকে বাষ্পে পরিণত করে ইঞ্জিন চালানো যায়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে তাপশক্তি যান্ত্রিকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

সুতরাং, উপরের দুটি উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, তাপ উৎপন্ন করতে গেলে কোনো না কোনো শক্তির প্রয়োজন হয়। আবার, তাপ থেকে অন্যান্য শক্তিও পাওয়া যায়। আমরা জানি, শক্তিকে একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তন করা যায়। অতএব, তাপকে একপ্রকার শক্তি বলা যায়।

(xiii) কোনো বস্তু উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য বাইরে থেকে কতটা তাপ নেবে বা হারাবে তা কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে ?

কোনো বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে, যথা 

বস্তুর ভর,

বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস,

বস্তুর উপাদান।

West Bengal Class 7 Science Suggestion

(xiv) বস্তু দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপ উক্ত বিষয়গুলির উপর কীভাবে নির্ভর করে তা উপযুক্ত উদাহরণসহ লেখো।

ভরের উপর নির্ভরশীলতা : গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ বস্তুর ভরের সমানুপাতিক হয়।

উদাহরণ: দুটি তামার গোলক নেওয়া হল যার একটির ভর অন্যটির দ্বিগুণ। গোলক দুটিকে গরম জলপূর্ণ পাত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডুবিয়ে রাখা হল যাতে উভয়ের উন্নতা সমান হয়। এবার উত্তপ্ত গোলক দুটিকে একটি মোমের ব্লকের উপর রাখা হলে দেখা যায়, বেশি ভরের গোলকটি বেশি পরিমাণে মোম গলিয়েছে এবং বেশি দূরত্ব প্রবেশ করেছে।

সুতরাং, উপাদান ও উষ্ণতা বৃদ্ধি সমান হলে যে বস্তুর ভর বেশি, তার মধ্যে নিহিত তাপের পরিমাণও বেশি হয়।

উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের উপর নির্ভরশীলতা : গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ বস্তুটির উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের সঙ্গে সমানুপাতিক হয়।

উদাহরণ:ধরা যাক্,একই ভরের দুটি তামার গোলকের উষ্ণতা যথাক্রমে 100°C ও 200°C করা হল। এবার উত্তপ্ত গোলক দুটিকে মোমের ব্লকের উপর রাখা দেখা যাবে দ্বিতীয়টি পরিমাণে মোম গলায় এবং ব্লকের মধ্যে বেশি দূরত্ব প্রবেশ।

সুতরাং, ভর ও উপাদান অভিন্ন হলে, যে বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস বেশি পরিমাণে হয়,সেটি বেশি পরিমাণে তাপ গ্ৰহণ বা বর্জন করে থাকে।

উপাদানের ওপর নির্ভরশীলতা: বস্তু দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ বস্তুর উপাদানটির উপর সরাসরি নির্ভর করে থাকে।

উদাহরণ : একই ভরের একটি তামার ও একটি সিসার গোলককে একই উষ্ণতা পর্যন্ত উত্তপ্ত করে মোমের ব্লকের উপর রাখলে দেখা যায়, তামার গোলকটি ব্লকের মধ্যে বেশি দূরত্ব প্রবেশ করেছে। সিসা অপেক্ষা তামার তাপ গ্রহণ বা বর্জন ক্ষমতা বেশি বলেই এমন ঘটে থাকে। সুতরাং, উপাদানভেদে বিভিন্ন পদার্থের তাপ গ্রহণ বা বর্জন ক্ষমতা আলাদা হয়।

(xv) ‘আপেক্ষিক তাপ’কাকে বলে?

কোনো পদার্থের একক ভরের উষ্ণতা একক পরিমাণে বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে যে পরিমাণ তাপ লাগে, তাকে ঐ পদার্থের উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে। সিসার তুলনায় তামার আপেক্ষিক তাপ বেশি। তাই, ভর ও উন্নতা পরিবর্তন সমান হলেও সিসা অপেক্ষা তামা বেশি তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে। বস্তু দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ নির্দেশক গাণিতিক সম্পর্কটি হল –

Q = mst, [যেখানে, Q = বস্তু দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপ, m = বস্তুর ভর, s = বস্তুর আপেক্ষিক তাপ, t = উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস।]

সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান সাজেশন

(xvi) অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন কাকে বলে?

অবস্থার পরিবর্তন (Change of State) তাপ প্রয়োগ বা অপসারণের দ্বারা পদার্থের এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন।

পদার্থের সাধারণ ভৌত অবস্থা মূলত তিনটি কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়। এই বিভিন্ন রূপগুলির অন্যটিতে অবস্থান্তর প্রক্রিয়াকে ছয়টি শ্রেণিতে যায়।

(xvii) ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) বলতে কি বোঝ?

তাপ প্রয়োগের ফলে যে-কোনো উষ্ণতায় কঠিন পদার্থের সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন বলে। সংশ্লিষ্ট পদার্থগুলিকে বলা হয় ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ।

উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন ইত্যাদির কঠিন থেকে বাষ্পে পরিবর্তন।

(xviii) অবক্ষেপণ (Deposition) বলতে কি বোঝ?

যে প্রক্রিয়ায় বাষ্প তাপ বর্জন করে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে অবক্ষেপণ বলে।

উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদির বাষ্প থেকে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর।

(xix) সংজ্ঞা লেখো :

(a) গলনাঙ্ক।

(b) স্ফুটনাঙ্ক।

(c) হিমাঙ্ক।

(a) গলনাঙ্ক (Melting Point) : প্রমাণ চাপে যে উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থ গলনের মাধ্যমে তরলে পরিণত হতে শুরু করে, —সেই উষ্ণতাকে বলা হয় ওই পদার্থটির গলনাঙ্ক। যেমন— প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273K

(b) স্ফুটনাঙ্ক (Boiling Point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থ স্ফুটনের মাধ্যমে বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে, তাকে ওই পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন— প্রমাণ চাপে জলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

(c) হিমাঙ্ক (Freezing Point) : প্রমাণ বায়ু চাপে, যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো পদার্থ সম্পূর্ণ জমে কঠিন পদার্থে পরিণত হতে শুরু করে, তাকে ওই তরল পদার্থের হিমাঙ্ক বলে। যেমন— প্রমাণ চাপে বিশুদ্ধ জলের হিমাঙ্ক হল 0°C বা 273K।

(xx) লীনতাপ কাকে বলে?

একক ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে পদার্থটির ওই অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ হয়।

জেনে রাখো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনের ফলে পদার্থের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন না।তাই, একে থার্মোমিটারে মাপা যায় না।এই জন্য এর নাম লীনতাপ (লুকিয়ে থাকা তাপ)।

(xxi) 'বরফ গলনের লীনতাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম' বক্তব্যটির অর্থ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর- উক্ত বিবৃতির অর্থ হল প্রমাণ চাপে 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বরফকে 80 ক্যালোরি তাপ দিলে তা সম উষ্ণতার 1 গ্রাম জলে পরিণত হবে।

(xxii) 'জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বলতে কী বোঝায়?

উত্তর- উক্ত বিবৃতিটি বোঝায় যে প্রমাণ চাপে 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জলকে আরও 537 ক্যালোরি তাপ দেওয়া হলে তা 100°C উষ্ণতার বাষ্পে রূপান্তরিত হবে।

(xxiii) 0°C উষ্ণতার বরফ ও 0°C উষ্ণতার জলের মধ্যে কোনটি বেশি ঠান্ডা ?

উত্তর: বরফ ও জলের উভয়ের উষ্ণতা 0℃ হওয়া সত্ত্বেও জল অপেক্ষা বরফের মধ্যে প্রতি গ্রামে 80 ক্যালোরি করে কম তাপ থাকে। ফলে, 0°C উষ্ণতার ঠান্ডা জল অপেক্ষা O°C উষ্ণতার বরফ বেশি ঠান্ডা হয়। তাই, 0°C উষ্ণতার বরফ ও 0°C উষ্ণতার জলের মধ্যে বরফ বেশি ঠান্ডা হয়।

(xxiv) হাতে স্পিরিট বা ইথার ঢাললে ওই জায়গাটি ঠান্ডা লাগে কেন ?

অথবা

হাত দিয়ে বরফ ধরলে ঠাণ্ডা লাগে কেন?

উত্তর: স্পিরিট বা ইথার উদ্বায়ী তরল বলে খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পে পরিণত হয় এবং হাতে স্পিরিট ঢাললে, স্পিরিট বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ হাত থেকে গ্রহণ করে। ফলে, হাতের ওই অংশ তাপ হারায় এবং হাত ঠান্ডা হয়ে যায়।

West Bengal Class 7th Science Question and Answer / Suggestion / Notes

(xxv) মাটির কলশির জল, ধাতব পাত্রে রাখা জলের তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা হয় কেন ?

অথবা

মাটির কলশির জল ঠাণ্ডা থাকে কীভাবে, তার ব্যাখ্যা দাও। 

উত্তর: মাটির কলশির গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্র দিয়ে কলশির জল চুঁইয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয়। এই বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ জল, কলশি থেকে সংগ্রহ করে। ফলে, কলশি ও কলশির জল তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু, ধাতব পাত্রের গায়ে কোনো ছিদ্র থাকে না। তাই, ওইসব পাত্রের গা দিয়ে জল চুঁইয়ে বাইরে আসতে পারে না। ফলে, জলের বাষ্পীভবনও হয় না এবং জল ঠান্ডাও হয় না।

(xxvi) গরমকালে ঘরের জানালা দরজা খোলা রেখে ভেজা পর্দা টাঙানো হলে ঘর বেশ ঠাণ্ডা থাকে কেন?

উত্তর: গরমকালে বাইরের গরম বায়ু ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার সময় ভিজে পর্দার জল ওই বায়ু থেকে তাপ শোষণ করে বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে, বায়ু তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়ে পড়ে। সে কারণে ঘর ঠান্ডা থাকে।

(xxvii)  প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় তাপের ভূমিকা লেখো। 

উত্তর: প্রাণীদের শারীরিক গঠন, জৈবিক ক্রিয়া এবং জীবনযাত্রার তারতম্যের পিছনে উষ্ণতার প্রত্যক্ষ প্রভাব বর্তমান। নিম্নলিখিত উদাহরণগুলি দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়-

● গ্রীষ্মকালে মানবশরীরে প্রচণ্ড ঘাম হয়। এর মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত তাপ বেরিয়ে যায় এবং দেহ ঠান্ডা হয়।

● গরমকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায়, কারণ— এদের লালাগ্রন্থি জিভ সংলগ্ন স্থানে অবস্থান করে। জিভ দিয়ে লালা নিঃসরণের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত তাপ বাইরে বেরিয়ে যায়।

● মেরু ভালুকের দেহ ঘন লোমে ঢাকা থাকে। গ্রীষ্মকালে দেহ ঠান্ডা রাখার জন্য এরা সাঁতার কাটে। সাঁতার কাটা ও বরফের ওপর দিয়ে হাঁটার সুবিধার জন্য এদের পায়ের থাবাগুলি চওড়া হয়।

● প্রবল ঠান্ডার জন্য পেঙ্গুইনের চামড়া পুরু হয় এবং চামড়ার নীচে চর্বির পুরু আবরণ থাকে। ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য এরা গা জড়াজড়ি করে বসবাস করে।

● দেহের রক্ত শীতল হওয়ার জন্য সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীরা (সাপ, কুমির, গিরগিটি ইত্যাদি) গরম বালিতে রোদ পোহায়। উভচর প্রাণীরা শীতের প্রকোপ সহ্য করতে না পেরে শীতঘুমে যায়।

● পাখিরা দীর্ঘসময় ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। ফলে, মেরু অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখিরা শীতকালে উষ্ণতার অঞ্চলে আসে এবং গ্রীষ্মকালে পুনরায় ফিরে যায়।

● নিরক্ষীয় বৃষ্টিপাত অঞ্চলে হাতির বড়ো কান, উন্ন ও আর্দ্র জলবায়ুতে হাতির শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

(xxviii) কোনো প্রাণী কীভাবে নিজের দেহে প্রয়োজনীয় তাপ সৃষ্টি করে?

উত্তর: প্রাণীরা নিজের দেহে প্রয়োজনীয় তাপ সৃষ্টি করার জন্য অবিরত খাদ্যগ্রহণ করে। পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে এই খাদ্য জারিত হয়ে তাপ উৎপন্ন হয়।

(xxix) প্রাণীর তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: বেশ কিছু প্রাণী তাদের দেহের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অথবা, তাদের বিশেষ আচরণকে কাজে লাগিয়ে দেহের উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট পাল্লার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। যেমন— গরমের দিনে মানুষের ত্বক থেকে ঘাম বা কুকুরের জিভ থেকে লালা ঝরে দেহের অতিরিক্ত জল বাইরে বেরিয়ে যায়। পেঙ্গুইনরা গা জড়াজড়ি করে। পাখিরা পালক ফুলিয়ে দেহতাপকে আবদ্ধ রেখে শীতার্ত পরিবেশে শরীর গরম রাখতে চেষ্টা করে। দেহের উষ্ণতা বজায় রাখার মাধ্যমে, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এই ধর্মকে বলা হয় প্রাণীর তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।

(xx) জীবজগতে উদ্ভিদের ওপর তাপের প্রভাবের কয়েকটি ঘটনা উদাহরণ দাও।

উত্তর:

● সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি ফুল শীতকালে ফোটে। কারণ— তখন তাপমাত্রা কম থাকে। পরিবেশের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মানের বেশি হলে এরা বাঁচতে পারে না। আবার বেল, জুঁই প্রভৃতি ফুল গ্রীষ্মকালে ফোটে, শীতকালে ফুটতে পারে না।

● উষ্ণতার প্রভাবে বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম হয়, উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং ফুল ও ফল ধারণ সম্ভব হয়।

● গ্রীষ্মকালে প্রবল উয়তায় উদ্ভিদ নেতিয়ে পড়ে এবং চারাগাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় ও শুকিয়ে যায়।

● বাবলা, আমরুল, শুশনি, রাধাচূড়া প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা দিনের বেলা একটি নির্দিষ্ট উস্নতায় খোলে, আবার, রাতে মুড়ে যায়। পদ্ম, গোলাপ ইত্যাদি ফুলের পাপড়ি উষ্ণতা বাড়লেই ফোটে।

● অধিকাংশ ফসলের উৎপাদনশীলতা উষ্ণতার নির্দিষ্ট মান বা পাল্লার ওপর নির্ভর করে। যেমন— চা বা কফি চাষের জন্য শীতল আবহাওয়া অনুকূল হলেও, ধান বা গমের ক্ষেত্রে তা সহায়ক নয়।

Post a Comment

0 Comments